চিয়া সিড ( Chia Seeds ) |
চিয়া সিড ( Chia Seeds ) খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা
সাইজে ছোট হলেও স্বাস্থ্যকর এবং পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবারের তালিকায় প্রথম দিকের অবস্থান কিন্তু ঠিকই দখল করে আছে এই চিয়া সিড।
ব্যাপক পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার এই 'চিয়া সিড' আপনার নিত্যদিনের খাবার তালিকায় যেন সহজেই রাখা যায় তাই আপনাদের জন্য আমাদের এবারের আয়োজন। আমরা চাই সবার জন্য এরকম সুপারফুড গুলোকে সহজলভ্য করতে।
চিয়া সিড খাবার উপকারিতা -
- ওজন কমায় ।
- এনার্জি এবং স্টামিনা বাড়ায়।
- ইমিউন সিস্টেম স্ট্রং করে।
- ব্লাড সুগার লেভেল নরমাল রাখে।
- ব্লাড প্রেসার ও কোলেস্ট্রল কমায়।
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে।
- ঠিক সময়ে এবং পরিপূর্ণভাবে ঘুম হতে সাহায্য করে।
- হজমে সাহায্য করে।
চিয়া সিড বা চিয়া বীজ হল সবচেয়ে পুষ্টিকর খাবারের মধ্যে এবং সাস্থ্যকর খাবারের মধ্যে একটি । শরির আর মস্তিষ্কের জন্য খুবই উপকারি পুষ্টি দিয়ে ভর্তি চিয়া সিড ।
এই ঊদ্ভিদ প্রাকৃতিক ভাবে দক্ষিন আমেরিকাতে উৎপাদন হয়।সাধারণত পুষ্টিগুণে ঠাসা উদ্ভিজ্জ খাদ্য বস্তু যেগুলো আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপযোগী, তাদের বলা হয় SUPERFOOD। চিয়া বীজ হল এমনি একটি SUPERFOOD,যা বর্তমানে খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
চিয়া বীজ কি?
আসলে চিয়া বীজের জন্ম সুদূর মেক্সিকোতে। স্থানীয় “Salvia hispanica” নামক প্রজাতির গাছের বীজ এটি, তাই এর কোনও বাংলা নাম নেই, এটি চিয়া বীজ নামেই প্রচলিত। ছোট, সাদা, ধূসর, বাদামী ও কালো রঙের এই বীজটি পুষ্টিগুণে ভরপুর এবং এর অনেক উপকারিতা আছে।
চিয়া বীজের পুষ্টিগুণ:
এতে রয়েছে ওমেগা-৩ জাতীয় ফ্যাটি অ্যাসিড যে কারণে এটি হার্টের পক্ষে খুব ভালো। এটি আমাদের রক্তে HDL cholesterol বাড়ায় যা শরীরের জন্য ভালো। এছাড়াও প্রচুর পরিমাণে রয়েছে প্রোটিন ও ফাইবার। রয়েছে আয়রন এবং ক্যালসিয়ামও।
এক আউন্স বা ৩০ গ্রাম (প্রায়) চিয়া বীজে রয়েছে প্রায় ৬ গ্রাম প্রোটিন, ৮.৫ গ্রাম ফ্যাট, ১১ গ্রাম ফাইবার, ১৩ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট (যার মধ্যে ১১ গ্রাম হল ফাইবার)।
দৈনিক এক আউন্স চিয়া বীজ খেলে ১৮% কালসিয়ামের চাহিদা, ২৭% ফসফরাসের চাহিদা এবং ৩০% ম্যাঙ্গানিজের চাহিদা পূরণ হতে পারে। বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই আমরা এই গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান গুলি পর্যাপ্ত পরিমাণে খাই না, সেক্ষেত্রে এই চিয়া বীজ খুবই উপকারী।
সুপারফুড চিয়া সীড (Chia Seed) সুপার ফুড কি?
সাধারণত পুষ্টিগুণে ঠাসা উদ্ভিজ্জ খাদ্য বস্তু যেগুলো আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপযোগী, তাদের বলা হয় সুপার ফুড । প্রাচীনকালের ইতিহাসে চিয়া সিড প্রধান খাদ্য হিসাবে জায়গা পেলেও খুব অল্প কিছুদিন হল চিয়া সিড আধুনিককালের ‘সুপার ফুড’ পরিচিতি পেয়েছে। গত কয়েক বছরে এর জনপ্রিয়তা তুঙ্গে উঠেছে। এখন সারা পৃথিবীরই স্বাস্থ্য সচেতন মানুষরা এটা খাচ্ছেন। চিয়া সীড বর্তমান সময়ে পৃথিবীর সুপার ফুড গুলোর মধ্যে অন্যতম।
চিয়া সীডের উৎপত্তি
মূলত চিয়া সীড একধরনের শস্য দানা। চিয়া সীডের আদি নিবাস মেক্সিকোতে হলেও ক্যালিফোর্নিয়া এবং ব্রিটেনে এটি বেশ জনপ্রিয়। মরুভূমির সালভিয়া হপ্পনিকা ( এটা উদ্ভিদ শ্রেনীর নাম) শ্রেণীর উদ্ভিদ থেকে চিয়া সীড এসেছে।
চিয়া সীডের স্বাদ
চিয়া সীডের স্বাদ অনেকটা পুদিনা পাতার কাছাকাছি। চিয়া সীড দুই ধরনের হয়ে থাকে। একটি কালো বর্ণের অন্যটি শ্বেত বর্ণের। ছোট আকৃতির এই বীজটির খাদ্যমান বেশ উচ্চমাত্রার। চলুন তবে এই সুপার ফুডটির (Chia seed) উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক।
১) চিয়া সীডে রয়েছে উচ্চমাএার এন্টিঅক্সিডেন্ট
এন্টিঅক্সিডেন্ট ত্বক ও দেহের অভ্যন্তরীণ কোষ রক্ষণাবেক্ষণে বেশ উপকারি ৷ চিয়া সীডে থাকা এন্টিঅক্সিডেন্ট আমাদের ত্বকের স্পর্শকাতর ফ্যাট রক্ষা করে। তাছাড়া ত্বকে বলিরেখা পড়া রোধ এবং কোষ গুলোকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে।
২) চিয়া সীডে রয়েছে উচ্চমাত্রার প্রোটিন
প্রোটিন আমাদের দেহের জন্য অত্যন্ত উপকারি। তবে বর্তমানে অধিক প্রোটিন গ্রহণ দেহের ক্ষতির কারণ হয়ে দাড়ায়। চিয়া সীড সেক্ষেত্রে আপনার জন্য বেশ উপযোগী একটি খাবার ৷ প্রতিদিন ১ আউন্স অর্থাৎ ২৮ গ্রাম চিয়া সীড থেকে ৪ গ্রাম প্রোটিন পাওয়া যায়। যাদের প্রোটিন গ্রহণে সমস্যা রয়েছে বা যারা নিরামিষ ভোজী, তারা খুব সহজে চিয়া সীড নিয়মিত গ্রহনের মাধ্যমে প্রোটিন পেয়ে যাবেন।
৩) উচ্চমাত্রার ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড রয়েছে চিয়া সীডে
তিসির বীজের মতো চিয়া সীড ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড সমৃদ্ধ। এক গবেষণায় দেখা গেছে স্যালমন মাছের চেয়ে বেশি ওমেগা -৩ ফ্যাটি এসিড পাওয়া যায় চিয়া সীডে। ওমেগা -৩ ফ্যাটি এসিডের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো ALA( alpha linolenic acid) যা হার্ট সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
৪) হাড়ের সুস্থতায় চিয়া সীড
হাড়কে সুস্থ ও মজবুত রাখতে,আমরা জানি প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবারের বিকল্প নেই। কিন্তু বর্তমান সময়ের গবেষণার এক রিপোর্টে উঠে এসেছে যে, চিয়া সীডে রয়েছে ক্যালসিয়াম, ফরসফরাস এবং প্রোটিন। চিয়া সীডে থাকা ক্যালসিয়ামে রয়েছে ১৮%। যা আপনার হাড়কে সুস্থ রাখতে যথেষ্ট। মজার বিষয় হচ্ছে, যে কোন ডেইরি প্রোডাক্টের চেয়ে বেশি পাওয়া যায়। নিরামিষ ভোজী থেকে আমিষ ভোজী সকলের জন্য চমৎকার ক্যালসিয়ামের উৎস চিয়া সীড।
৫) রক্তের সুগার লেভেল কমাতে সাহায্য করে
রক্তের সুগার লেভেল বৃদ্ধি পাওয়া টাইপ-২ ডায়বেটিসের প্রধান লক্ষণ। ক্রমাগত ভাবে রক্তের সুগার লেভেল এভাবে বৃদ্ধি পাওয়া হার্টের সমস্যা বৃদ্ধির অন্যতম কার
আশার কথা হচ্ছে চিয়া সীড নিয়মিত গ্রহনে রক্তে ইনসুলিনের সেনসিটিভিটি মাএা কমাতে সাহায্য করে। নিয়মিত চিয়া সীড আপনাকে অনেকটা রক্তের সুগার লেভেল বৃদ্ধি হওয়া কমাতে সাহায্য করবে এবং হার্টকে রাখবে সুস্থ।
৬) ত্বকের সংক্রমনের মাএা কমায়
প্রতিদিনের দূষণ, অস্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ এবং কৃএিম প্রসাধনীর দাপটে ত্বকের সংক্রমণ নিত্য বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে আমাদের জীবনে। চিয়া সীড আপনাকে এই ত্বকের সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করবে।প্রতিদিন ৩৭ গ্রাম নিয়মিত গ্রহণে ত্বকের এই সমস্যা থেকে মুক্তি মিলবে। মূলত এর নিয়মিত গ্রহণ রক্তের কনিকা সমূহ সুস্থ থাকে এবং ত্বকে অক্সিজেনের মাএা বৃদ্ধি করে। ফলে আপনার ত্বক ভিতর ও বাহির থেকে হয়ে ওঠে স্বাস্থ্যউজ্জ্বল।
৭) ওজন কমাতে সাহায্য করে
Chia seed আপনার ডায়েট চার্টের জন্য যথা উপযুক্ত খাবার৷ কারন চিয়া সীড আপনি যে খাবারের সাথে মিশিয়ে গ্রহণ করুন না কেন, পেটে যাবার পর তা ফুলতে শুরু করে এবং আপনার পেট ভরে যায়। ফলে ক্ষুধা কমে যায় এবং অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণ করার প্রবনতা হ্রাস পায় । সেক্ষেত্রে আপনার বাড়তি ওজন সহজে ঝরে গিয়ে চলে আসবে স্বাভাবিক আকারে। এখানে একটু বলে রাখা ভালো,চিয়া সীড খাবার হজমে বেশ সহায়তাকারি।
চিয়া সীড মানবদেহের জন্য খুবই উপকারি সব দিক থেকে। আপনার দেহের অভ্যন্তরীণ রক্ষণাবেক্ষণ সহ বাহ্যিক সৌন্দর্যের জন্য চিয়া সীড কাজ করে থাকে। তাই বলা যায়, শুধু শরীর সুস্থ রাখতে এবং সৌন্দর্য বজায় রাখতে চিয়া সীডের ভূমিকা অসামান্য।
কিভাবে রোজকার ডায়েটে রাখবেন Chia seed?
এটি শুধু জলের সাথে মিশিয়ে খাওয়া যায়, তবে জলের সাথে মেশালে এটি একটি থকথকে, জেল এর মত রূপ নেয় যা, গলাধঃকরনে সমস্যা হতে পারে। তাই এটি খাওয়ার সবথেকে ভালো উপায় হল, টকদই এর ওপর ছড়িয়ে, বা salad এর ওপর ছড়িয়ে খাওয়া। চাইলে টকদই, শসা ও চিয়া বীজ দিয়ে সুস্বাদু স্মুদি বানিয়েও খাওয়া যায়। বেকিং এর ক্ষেত্রে এটিকে জলে গুলে ডিমের বদলেও ব্যবহার করা যায়।
- সালাদ বা জুসের সাথে যোগ করতে পারেন চিয়া সীড।
- ( ARTS ) ওটস এর সাথে যোগ করে খেয়ে নিতে পারেন সকালের নাস্তায়।
- তবে রান্না সরাসরি যোগ না করার ভাল। বরং আপনি চায়লে রান্না করা পছন্দের খাবারের সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন সুপার ফুড চিয়া সীড।
- শিশু থেকে সব বয়সীদের খাবারের নিয়ম-ওটমিল বা দই
- স্যালাড বা সালাদ ড্রেসিং
- স্যুপ ,চিয়াই পুডিং
- মফিন, রুটি ,বেকড পণ্য ডিম পরিবর্তে
- শরবত বা জুসের সাথে
- খাবারের উপর ছিটিয়ে পরিবেশন করবেন।
- বাচ্চাদের প্রতিদিন এক চামচ এবং বড়দের জন্য প্রতিদিন দুই টেবিল চামচ
মনে রাখবেন:
প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকার কারণে অতিরিক্ত পরিমাণে চিয়া বীজ খেলে হজমের সমস্যা হতে পারে। রোজকার খাবারে চিয়া বীজ রাখলে পর্যাপ্ত পরিমাণে জল খাওয়া তাই একান্তই প্রয়োজন। কিন্তু অন্য খাবার বাদ দিয়ে শুধু চিয়া বীজই খেলে হবে না, রোজকার সুষম খাবারের সঙ্গে মিশিয়ে চিয়া বীজ খেতে হবে। সব শেষে তাই আমি বলব, সবার শরীরের ধরণ এক হয় না- যারা সুগারের রোগী, বা যারা ওজন কমানোর জন্য ডায়েট করছেন বা করতে চান তারা পুষ্টিবিদের সাথে কথা বলে, তাঁর পরামর্শ অনুযায়ী এটি খাওয়া শুরু করুন।
0 Reviews